মাধবপুর প্রতিনিধিঃ- চারদিকে শুনশান নিরবতা,অশ্রুসিক্ত স্বজনের চোখ।কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন!আবার স্বজন্দের কেউ এই মর্মান্তিক দৃশ্য সহ্য করতে পারবে না বলে স্থান ত্যাগ করেছন।
নরসিংদীতে রাজনৈতিক মামলায় আসামি হওয়া এক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মৎস্যজীবীলীগের আহ্বায়কের মাত্র ৩ ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া হাতে মায়ের জানাজায় অংশ নিলে এলাকায় এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্যপট তৈরি হয়।
নরসিংদীর শিবপুরে ৩ ঘন্টার জন্যে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সরকার ও সাথে তার বড় ভাই দুলাল সরকার।
গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে কুন্দারপাড়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠে তার মায়ের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
মানবিক বিবেচনায় পুলিশের পক্ষ থেকেও ওই চেয়ারম্যানকে জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।তখন পড়নে হাতকড়া ছিল।
চেয়ারম্যান জাহিদ সরকার বক্তব্যে বলেন,আমার মা অসুস্থ ছিল তার কষ্ট হবে ভেবে কারাগারে গিয়ে আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছে পোষন করতে চাইলে আমি বারণ করতাম।আমার মা অসুস্থ ছিল। আমার মা বলতো আমার ছেলেকে দেখলে আমি ভালো হয়ে যাব।আজ এভাবে আমার মা চিরবিদায় নিবে ভাবতে পারিনি।কিছুক্ষণ পর আমি চলে যাচ্ছি আমার আত্মাটা পরে রইলো এখানে।জেনে না জেনে আমার বৃদ্ধ মা কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে অপনারা নিজগুনে তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
তিনি আরো বলেন,আমার বাবা দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছে।মিথ্যা মামলায় দীর্ঘকাল আমি নিজেও কারাবাস করেছি।আমার বাপ ভইয়েরা ওই এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছে,মানুষের সেবা করেছে।আমি আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে বিপুল ভোটে একজন জনপ্রতিনিধি হয়েছি। বিএনপি বা জামাতের ভাইয়েরা কখনো বলতে পারবে না আমি কাউকে হয়রানি করেছি কিংবা কাউকে কষ্ট দিয়েছি।তাহলে আমার সাথে কেন এমন অন্যায়।আমি সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার চাই।
এছাড়া জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন-সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আবদুল মান্নান ভুইয়া পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম মৃধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মৃধা, এডভোকেট রিপন সরকার, সাবেক ইউপি সদস্য হাসান সরকারসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগন।
জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জাহিদ সরকারের মায়ের দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফন শেষে পুলিশের গাড়িতে করে তাদের আবার নরসিংদী জেলা কারাগারে নেওয়া হয়। এর আগে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫ টায় জাহিদ সরকারের মা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
মায়ের মৃত্যুর পর জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য জাহিদ সরকার ও দুলাল সরকারের পক্ষ থেকে তার আইনজীবী প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন জানান। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৩ ঘণ্টার জন্য তাদের প্যারোল মঞ্জুর করেন। বিকেল তিনটার দিকে বিশেষ পুলিশ পাহারায় তাদের নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে কুন্দারপাড়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ওই চেয়ারম্যান ও তার ভাই প্রথমে বাড়িতে গিয়ে মৃত মাকে দেখেন। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন। এরপর হাতকড়া পরেই মায়ের জানাজায় অংশ নেন।
শিবপুর মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসাইন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ সরকার ও তার এক ভাইকে আমরা কড়া নিরাপত্তা দিয়ে,তার মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি।জানাযার সময় তাদের হাতকড়া খোলে দেয়া হয়।পরে যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা কারাগারে প্রেরণ করতে সহায়তা করি।
গ্রেপ্তারকৃত চেয়ারম্যান জাহিদ সরকারের ছেলে জাহাঙ্গীর সরকার জানান,সেদিন মাত্র অল্প কিছুক্ষণের জন্য আমার দাদুর জানাজায় আমার বাবাকে পেয়েছি।আমার বাবাকে আমি তেমন একটা পাইনি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মামলায় জেলে জেলে তার জীবন কেটেছে।বর্তমান সরকারের কাছে আমি আমার পিতা নিঃশর্ত মুক্তি ও ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
ছবি: নরসিংদির শিবপুরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া হাতে মায়ের জানাজায় ইউপি চেয়ারম্যান
জাহিদ সরকার।