মাধবপুর(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের মাধবপুরে শচীন্দ্র গোস্বামীর নামের এক লোকের পরিত্যক্ত ভূমি বাসুদেব গোস্বামী নামে এক লোক ভুয়া ওয়ারিশ সেজে স্থানীয় এক ভূমি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে আকিজ গ্লাসকো কোম্পানির কাছে ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।এভাবে তারা আরো কয়েক একর জায়গা জালিয়াতের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে এমন অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।
ভুয়া ওয়ারিশান সনদ বানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান,সাব রেজিস্টার অফিস ও ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে হয়েছে এসব জালিয়াতির কর্মকাণ্ড।
এসব নিয়ে স্থানীয় আন্দিঊড়া ইউপির হাড়িয়া গ্রামের ফুল মিয়ার পুত্র আমিরুল ইসলাম নামে এক যুবক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন।হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনও এটি তদন্ত করছে।কিন্তু তদন্তের কোন অগ্রগতি মিলছে না।
অনুসন্ধানে করে দেখা যায়,হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া ইউপির হাড়িয়া গ্রামের মৃত ভৈরব চন্দ্র গোস্বামীর পুত্র শচীন্দ্র গোস্বামীর হাড়িয়া মৌজার এসএ ১৫৩ দাগে ৯ শতক ও এসএ ২২ (বিএস ১২ বার ১৩) দাগে ৩০ শতক মোট ৩৯ শতক পরিত্যক্ত ভূমি বাসুদেব গোস্বামী নামে এক ভুয়া ওয়ারিশ স্থানীয় এক ভূমি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে একটি কোম্পানীর কাছে বিক্রি হয়েছে।
আরো জানা যায়,শচিন্দ্র গোস্বামী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ও দেশ ভাগের সময় ভারত চলে যায়। আর আসে নি।তার কোন ওয়ারিশ নেই।অজ্ঞাত ওয়ারিশ বাসুদেব ৩০/৬/২০১৪ তারিখ তৎকালীন আন্দিউড়া ইউপির চেয়ারম্যান শামসু মিয়ার মাধ্যমে শচীন্দ্র গোস্বামীর পুত্র কানাই লাল গোস্বামী এবং কানাইলাল গোস্বামীর পত্র বাসুদেব গোস্বামী মর্মে একটি মিথ্যা ভিত্তিহীন ওয়ারিশান সনদ লিখে বানায়।সে এই জাল ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমেই জমির নিজের নামে করে নিয়েছে। দলিলে বাসুদেব গোস্বামীর ঠিকানা কুমিল্লা ব্যবহার করলে বাস্তবে ঐ ঠিকানায় এই নামে কেউ নেই প্রমাণস্বরূপ একটি সংস্লিষ্ট চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন রয়েছে। এছাড়া এই নামে মাধবপুরের স্থানীয় এলাকা হাড়িয়া গ্রামেও কেউ আছে বলেও কোন প্রমাণ নেই।
স্থানীয় স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান ,বাসুদেব বৈধ কোন ওয়ারিশ নয়।সাব সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এন্ট্রিকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র,সাক্ষীগন,জন্মনিবন্ধন অথবা টিপসই পরীক্ষা করলেই ওই ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত হবে।বাসুদেব গোস্বামী একজন বুয়া ওয়ারিশ, মাধবপুরের চারাভাংগা সাব রেজিষ্টি অফিসের দলিল নং ৬২৩১/২০১৩ইং দলিলে গোলাম মস্তোফা চৌধুরী লিটন নামের এক ভূমি কর্মকর্তার নামে সাব কবলা রেজিষ্ট্রি করেছে।পরে সংস্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিস থেকে বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করেই ১৬৭০/২০১৪ নং মোকদ্দমার মাধ্যমে আরো কিছু বিতর্কিত জমিসহ লিটন নিজের নামে নামজারি করে।পরে লিটন ৩০/৬/২০১৪ তারিখে ৩৩২৮ নং সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে ৩৯ শতক জায়গা স্থানীয় আকিজ গ্লাসকো নামে একটি কোম্পানীর মালিক ও আকিজ গ্রুপের এমডি শেখ বশির উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেন।
এর মধ্যে ৯ শতক জায়গার মালিকানার দাবীদার স্থানীয় হাড়িয়া গ্রামের ফুল মিয়া নামের এক কৃষক জানান, আনরেজিস্ট্রার দলিলমুলে দখল রেকর্ডমুলে মালিকানা আমার।এটা নিয়ে থানা ও আদালতে মামলাও রয়েছে।কোম্পানীর লোকজন আমাকে আমার ৯ শতক জায়গায় ভিড়তে দেয় না।বর্তমানে এই জায়গায় মাধবপুর উপজেলার আকিজ গ্লাস ইন্ড্রাস্ট্রিজের ভেতরে অবস্থান করছে।
ঐ পরিত্যক্ত ভূমির ক্রেতা স্থানীয় বাসিন্দা ও বর্তমানে সিলেট সেটেলমেন্ট অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা গোলাম মস্তোফা চৌধুরী লিটন জানান,আমি জায়গা কিনে নিয়েছি।কোন ভুল করলে বাসুদেব করেছে আমি না।আর তদন্তে সত্যতা পেলে সে ফাসবে আমি না।
মূলত পরিত্যাক্ত,নামবিহীন বা খাসতুল্য এমন কয়েক একর ভুমি আকিজ গ্লাসকো কোম্পানী লি. লিটনের মত দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে।এই কেলেংকারির সাথে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান,সাব-রেজিস্টার,দলিল লেখক,ভূমি অফিসের লোক ও দলিলের সাক্ষীসহ অনেক যোগসাজোশ রয়েছে।
প্রসঙ্গত,পরিত্যক্ত সম্পত্তি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি) আদেশ, (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১৬, ১৯৭২) ও ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ পরিত্যক্ত সম্পত্তি (জমি, ভবন ও অন্য যেকোন সম্পত্তি) বিধির বিধানাবলির আওতায় ব্যবস্থিত হয়ে থাকে।ইহা দখল আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।